শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৫ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : গুমের ঘটনার পেছনে সরকারের কোন হাত নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন “গুমের ঘটনার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী জড়িত নয়। কোন গুম আমাদের এখানে হয় না, তারা আত্মগোপন করে।” ঢাকার বসুন্ধরা এলাকা থেকে নিখোঁজ হবার পর উনিশ মাস পার হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত কোন খবর মেলেনি স্থানীয় বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের।
তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ২০১৩ সালে বসুন্ধরা এবং শাহীনবাগ এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া মোট আট জনের মধ্যে একজন হচ্ছেন সুমন। এসব ঘটনাকে পরিবারের সদস্যরা ‘গুম’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, বিশেষ পুলিশ র্যাবের গাড়িতে করেই এদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে তারা জানতে পেরেছেন। যদিও নিরাপত্তা বাহিনী বা সরকারের পক্ষ থেকে একথা অস্বীকার করা হয়।
সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম বলেন, কোন খবর নেই তার ভাইয়ের। “আমরা জিডি করতে চাইলে জিডি নেয়া হয়নি। আমরা কয়েক দফায় সবগুলো প্রশাসনিক সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছি, অনেকগুলো প্রেসকনফারেন্স করেছি। তারপরেও কোন সদুত্তর পাইনি। তাদের কথা ‘দেখছি’, ‘খুঁজছি’ এসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।”
বাংলাদেশের একটি মানবাধিকার সংস্থা বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশে অন্তত ৩৬টি এবং গত আট বছরে ৩৩০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে । তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, গুমের শিকার মানুষদের অধিকাংশকে আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই পটভূমিতে আজ পালিত হচ্ছে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস। বরাবরের মতো এবারও জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে গুমের শিকার মানুষদের খুঁজে বের করার জন্য সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়।
সুমনের সাথে একই দিনে গায়েব হওয়া অন্য সাতজনের মধ্যে দুজনের আত্মীয়রা মামলা করেছেন ‘নিখোঁজ’ হিসেবে উল্লেখ করে। তাদের কথা হলো ‘গুমের’ অভিযোগ আনলে পুলিশ মামলা নেয় না। এসব ব্যক্তিদের স্বজনেরাও এখনো অপেক্ষায় দিন গুনছেন। এদের মধ্যে বিরোধী দলের নেতাকর্মী আছেন, তার বাইরেও অনেকে আছেন।
২০১৪ সালের মার্চে কুমিল্লায় নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় যুবলীগ নেতা কাজি রকিবুল হাসানকে। তার পিতা কাজি আবদুল মতিন অভিযোগ করছেন, র্যাব সদস্যরাই গাড়িতে করে তাকে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেও তিনি তার ছেলের সন্ধান পাননি। তিনি র্যাব সদস্যদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন বলে জানান, তবে এতে এখনো কোন অগ্রগতি হয়নি।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একজন পরিচালক নূর খান বলছেন, গত আট বছরে এরকম গুম হওয়া তিন শতাধিক মানুষের অধিকাংশের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা এখনো জানা যায় নি। নূর খান কলেন, “খুব স্বল্প সংখ্যক লোক ফিরে এসেছে, কিছু লোকের লাশ পাওয়া গেছে, অন্য কিছু লোককে নতুন করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।” তিনি বলেন, যারা ফিরে এসেছেন, তারা যে বিভীষিকাপূর্ণ বর্ণনা দিয়েছেন তা নিরাপত্তার জন্যই প্রকাশ করা যাবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলছেন, গুম হওয়ার পেছনে সরকারের কোন হাত নেই। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন “গুমের ঘটনার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী জড়িত নয়। কোন গুম আমাদের এখানে হয় না, তারা আত্মগোপন করে।”
কিছুকাল আগে বিএনপির একজন নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হবার পর তাকে ভারতে পাওয়া যাবার ঘটনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আর্থিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণে অনেকে আত্মগোপন করে, আর লোকে মনে করে যে সে গুম হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ ধরণের কথিত ‘গুমের ঘটনার’ বেশিরভাগ লোককেই পরে উদ্ধার করা হয়েছে বা তারা ফিরে এসেছেন। মি. খান বলেন, “মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অনেক সময় আটকের ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীরা এসব কর্মংকান্ড করে। এগুলো কি গুম নাকি? তবে পুলিশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদের উদ্ধার করেছে, সত্য উদ্ঘাটন করেছে।”
গুমের শিকার অনেকের পরিবার থেকে সরকারি বাহিনীর গাড়ি ব্যবহার করেও এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হয়, সে ব্যাপারে আসাদুজ্জামান খান বলেন, সরকারি বাহিনী যাদের এ্যারেস্ট করেন তাদের সময়মতই আদালতে তোলা হয়। মি. খান বলেন, আমি জোর গলায় বলতে পারি মানবাধিকার সংস্থাগুলো যেসব কথা বলছে তা তারা অনেকসময় না জেনেই বলছে। গুম শব্দটা এক্ষেত্রে ‘এপ্রোপ্রিয়েট’ বা যথাযথ নয়-বলেন মন্ত্রী। সূত্র : বিবিসি